ঢাকা,শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

চকরিয়ায় সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত সিরাজ-বাবুলের দুই পরিবার অনিশ্চিত জীবনের মুখোমুখি 

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: একদিন আগেও ছিল সাজানো গোছানো সুন্দর সংসার। ছিল দুইটি পরিবারের হাজারো স্বপ্ন। কিন্তু ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে সাজানো সেই সংসার তছনছ হয়ে গেছে কক্সবাজারের চকরিয়ায় সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত দুইজনের পরিবারে। পরিবারের উর্পাজন অক্ষম ব্যক্তি সিরাজ আহমদ ও মো.বাবুল দু’জনই দিনমজুরের কাজ করতেন। যা আয় করতেন তা দিয়ে মোটামুটি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভালোই কাটছিলো জীবন সংসার। বুধবারের হৃদয় বিদারক একটি দূর্ঘটনা সব কিছু শেষ করে দিয়েছে দুইটি পরিবারের। এখন তাদের সংসারে নেমে এসেছে শোকের কালো ছায়া। বুধবার বিকালে বাড়ির জন্য বাজার-সদায় করে লোহাগাড়া থেকে চকরিয়া উপজেলার কোনাখালীতে নিজ বাড়িতে ফেরার কথা থাকলেও তাঁরা ফিরেছেন লাশ হয়ে।

বুধবার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ার বুড়ির দোকান এলাকায় কাভার্ডভ্যান ও লেগুনা গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ হারায় প্রায় ছয় যাত্রী। তাদের মধ্যে ছিলো সিরাজ আহমদ ও বাবুলও। ঘটনার দিন রাতে চিরিংগা হাইওয়ে পুলিশ তাদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। পরে চকরিয়া উপজেলার কোণাখালী ইউনিয়নে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে দুইজনের নামাজে জানাজা শেষে সামাজিক কবরস্থানে তাদেরকে দাফন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কোনাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার।

কোনাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার বলেন, নিহত সিরাজ ও বাবুল দুজনই দিনমজুরের কাজ করতেন। সিরাজের স্ত্রী ও তিন ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছেন। তাদের মধ্যে এক ছেলে বিদেশ প্রবাসী। অন্য দুই ছেলে ও মেয়ে বাড়িতে থাকেন। ছেলেরাও দিনমুজরের কাজ করে সংসার চালান। এতে মোটামুটি ভালোই চলছিলো তাদের সংসার ।

তিনি বলেন, কাজের কারণে তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় চলে যেতো। তার এক স্ত্রী ও ছোট ছোট এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তাদের পরিবারের রোজগার করার মতো আর কোন লোক নেই। সন্তানরা তাদের প্রিয় বাবাকে হারিয়ে নির্ভাক হয়ে চেয়ে আছন। তারা বুঝতে পারছেনা তাদের বাবা আর বেঁচে নেই। আর তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে কোন শান্ত করা যাচ্ছেনা। কিছুক্ষণ পর পর মূর্ছা যাচ্ছেন। পাড়া-প্রতিবেশিদেও শত শান্তনাও কোন কাজে আসছেনা।

কোনাখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা এ.জে নেজাম উদ্দিন বলেন, গত শুক্রবার দুইজন পার্শ্ববতী লোহাগাড়া উপজেলা সদরে যান দিনমজুরের কাজ করতে। কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হওয়ায় তাদের কাজ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে তারা বাড়িতে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেই। তাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বুধবার বিকেলে লোহাগাড়া স্টেশন থেকে যাত্রীবাহি লেগুনা পরিবহণের একটি গাড়িতে উঠে। গাড়িটি চকরিয়ার বুড়ির দোকান এলাকায় পৌছলে বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগামী কাভার্ডভ্যানের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে মারা যায় তারা দুজন।

সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দুই পরিবারে চলছে শোকের মাতম। তাদের বাবাকে হারিয়ে কেউ বিলাপ ধরে কান্না করছেন। আবার স্বামী হারিয়ে মূর্ছা যাচ্ছেন স্ত্রীরা। এই এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য। পাড়া-প্রতিবেশিরা চেষ্টা করছেন তাদের নানাভাবে শান্তনা দেয়ার। কিন্তু শান্তনাই শুনছেনা তারা। একে অপরকে জড়িয়ে কান্নাকাটি করছেন। তাদের কান্নায় পুরো এলাকায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যেও অবতারণা হয়ে উঠেছে। একইভাবে অন্য চার পরিবারও চলছে শোকের মাতম।

এদিকে, দূর্ঘটনার কারণ জানতে চাইলে মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার চিরিংগা হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.আনিসুর রহমান বলেন, যখন দূর্ঘটনাটি ঘটেছে তখন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। যার কারণে কাভার্ডভ্যান ও লেগুনা গাড়ির চালকরা কে কাউকে দেখতে পারেনি। যার কারণে মর্মান্তিক দূর্ঘটনাটি ঘটেছে। এসময় গাড়ি দুটি পার্শ্ববর্তী খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে মারা যায় লেগুনার ছয় যাত্রী। আহত হয় দুই যাত্রী। নিহতদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.হাবিবুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় থানায় চিরিংগা হাইওয়ে ফাঁড়ির একজন কর্মকর্তা বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এতে দুই গাড়ির চালক ও হেলপারকে আসামী করা হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদেও ক্ষতিপূরণের বিষয়টি চিরিংগা হাইওয়ে পুলিশ দেখভাল করছেন।

প্রসঙ্গত: বুধবার ২২ জুলাই বিকালে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলার হারবাং স্টেশনের অদুরে বুড়ির দোকান এলাকায় কাভার্ডভ্যান ও যাত্রীবাহি লেগুনা পরিবহণের একটি গাড়ির সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে লেগুনার চালক ও হেলপারসহ ছয়যাত্রী নিহত ও দুই যাত্রী আহত হয়।

নিহতরা হলেন- লেগুনা চালক চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলা বড়হাতিয়া এলাকার ফরিদুল আলমের ছেলে মো.মিনহাজ , একই উপজেলার পদুয়ার মিঠারদিঘী এলাকার লেগুলার হেলপার মোহাম্মদ শহীদ, চকরিয়া উপজেলার কোণাখালী ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের হাসান আলী পাড়ার আমির হামজার ছেলে মোহাম্মদ বাবুল , একই ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মধ্যম কোণাখালীর মৃত আলী মিয়ার ছেলে সিরাজ আহমদ, একই উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বৃন্দাবনখিল এলাকার মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে বদিউল আলম ও লামা উপজেলার আজিজনগর ৩নং ওয়ার্ডের সন্দীপ পাড়ার আবদুল ওয়াজেদের ছেলে মো.আল-আমিন।

আহতরা হলেন, বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ থানার অয়েজ উদ্দিনের ছেলে মো.আইনুণ ও চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের করম মুহুরী পাড়ার গুরা মিয়ার ছেলে মো.রায়হান । তারা বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।##

পাঠকের মতামত: